মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ::
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার করিয়ারদিয়ার বহু চিংড়ি ঘের ও চিংড়ি চাষীদের নানান ধরনের হুমকি ধমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে গত ১৫ দিন ধরে চাঁদাদাবী করে অব্যাহতভাবে হুমকি দিচ্ছে বদরখালী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ীর আইসি পায়েল হোসেন! এ প্রতিবেদকের কাছে এমনটাই অভিযোগ করেছেন, করিয়ারদিয়ার বেশ কয়েকজন চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষীরা। আর যারা ওই পুলিশ কর্মকর্তার দাবীকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন তাদের পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে এনে ব্যাপক নির্যাতন চালিয়ে আদায় করা হচ্ছে চাঁদার টাকা। গত ১৫ দিন ধরে পেকুয়া উপজেলার করিয়ারদিয়ার প্রতিটি চিংড়ি ঘেরে পুলিশ কর্মকর্তা পায়েল হোসেন ও তার সঙ্গীয় ফোর্স গিয়ে সরাসরি চিংড়ি ঘেরের মালিক ও চাষীদেরকে চাঁদার টাকার হুমকি দিচ্ছে। তার দাবীকৃত চাঁদা না দিলে করিয়ার দিয়ার চিংড়িঘেরের মালিকদের চিংড়িঘের থেকে উৎখাতেরও হুমকি দিচ্ছে নৌ পুলিশের ওই গুণধর কর্মকর্তা! পুলিশের এ ধরনের আচরণে করিয়ারদিয়া এলাকার অসংখ্য চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষীদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নৌপুলিশের ওই কর্মকর্তার সাথে গোপনে দেখা করে চাঁদা দিচ্ছেন বলে গোপন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরেজমিনে পেকুয়া উপজেলা উজানটিয়ার ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া দ্বীপ পরিদর্শন করে চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করিয়ারদিয়া নাপিতার ঘোনা চিংড়ি ঘেরটিতে চিংড়ি মাছের চাষ করছেন শাহাব উদ্দিন চেয়ারম্যান এবং শফিউল আলম চৌধুরী। লম্বা বাইশাড়িয়া চিংড়ি ঘেরটিতে চিংড়ি চাষ করছেন জকরিয়া চৌধুরী, কুম্বাই কাড়িয়া চিংড়ি করছেন আজিজুল হক, করিয়ারদিয়ার বিচাখালী আরএস চিংড়ি ঘেরটি করছেন এসফার উদ্দিন। এসব চিংড়ি ঘেরের মালিক ও চাষীরা অভিযোগ করেছেন, গত ১৫ দিন ধরে বদরখালী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পায়েল হোসেন মোটা অংকের চাঁদাদাবী করছেন। তার দাবীকৃত চাঁদা না দিলে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীসহ গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে। প্রতি চিংড়ি ঘরে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা পায়েল হোসেনের ভিজিটিং কার্ড বিলি করা হচ্ছে। করিয়ারদিয়া পেকুয়া উপজেলার একটি বৃহৎ মৌজা হলেও চকরিয়ার বদরখালী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ীর আইসি আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে চিংড়ি ঘেরের মালিক ও চাষীদেরকে চাঁদার জন্য হুমকি দিচ্ছে।
করিয়ারদিয়ার বাইশকাড়িয়া চিংড়ি ঘেরের মালিক জকরিয়া চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, প্রতিনিয়তই তাদের চিংড়ি ঘেরে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করছেন বদরখালী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পায়েল। তার দাবীকৃত চাঁদা না দেওয়ায় করিয়ারদিয়ার চিংড়ি চাষী আজিজুল হককে ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বদরখালী জেটি থেকে আটক করে নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে বেধড়ক মারধর করা হয় আজিজুল হককে। এরপর চিংড়ি চাষীর পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা করছেন আইসি পায়েল। আজিজুল হক চকরিয়া ডুলাহাজার এলাকার মৃত ছালেহ আহমদের পুত্র। চিংড়ি ঘেরের মালিক জকরিয়া আরো জানান, বদরখালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পায়েলের বেপরোয়া চাঁদাদাবীর হুমকিতে করিয়ার দিয়ার চিংড়ি ঘেরের মালিক ও চাষীরা চরমভাবে আতংকিত হয়ে পড়েছে। তিনি করিয়ারদিয়ায় চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষীদের চাঁদাবাজীর কবল থেকে রেহাই পেতে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্থক্ষেপ চেয়েছেন।
করিয়ার দিয়ার চিংড়ি চাষীরা অভিযোগ করেছেন, বদরখালী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পায়েল গত এক সপ্তাহ পূর্বে করিয়ার দিয়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের পুত্র চিংড়ি চাষী নুরুল ইসলাম নেছারকে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। নেছারের কাছ থেকে ইতিপূর্বে আইসি পায়েল মোটা অংকের চাঁদা দাবী করেছিল। দাবীকৃত চাঁদা না দেওয়ায় নেছারকে ধরে এনে ব্যাপক মারধর করা হয়েছিল। পরে নেছারের পরিবারের লোকজন এসে পুলিশ কর্মকর্তা পায়েলকে ঘুষ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেন। এছাড়াও গত এক মাস পূর্বে বদরখালী বাজারের ব্যবসায়ী ও পেকুয়ার বাসিন্দা আলা উদ্দিন আলো ব্যবসা প্রতিষ্টানে ভাংচুর চালায় আইসি পায়েল। এভাবে আরো অহরহ অভিযোগ বেরিয়ে আসছে বদরখালী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পায়েলের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বদরখালী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পায়েলের সাথে ৬ অক্টোবর রাত ৮টা ২ মিনিটে প্রতিবেদক মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তিনি করিয়ার দিয়ার কোন চিংড়ি চাষীর কাছ থেকে চাঁদাদাবি করেনি। চিংড়ি ঘেরের মালিক ও চাষীদের চিংড়ি ঘেরের স্বপক্ষে কাগজপত্র নিয়ে তার অফিসে আসার জন্য বলা হয়েছিল। এরপর তিনি আর কথা না বাড়িয়ে এ প্রতিবেদককে তার অফিসে চা-নাস্তার দাওয়াত জানিয়ে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
পাঠকের মতামত: